ভারতে খবরের সত্য-মিথ্যা যাচাই করবে সরকার, সাংবাদিকদের প্রতিবাদ
০৮-এপ্রিল-২০২৩, রাত ৮:০২
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যেদিন জানালেন সরকারের সমালোচনার অর্থ দেশের বিরোধিতা নয়, তার পরদিনই কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিল, সরকার–সংক্রান্ত খবরের সত্যতা যাচাইয়ের ভার থাকবে প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর (পিআইবির) হাতেই। কোনো খবর বা তথ্যকে পিআইবি ‘অসত্য’ বা ‘ফেক নিউজ’ জানিয়ে দিলে তা প্রচার করা যাবে না। সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, পিআইবি চিহ্নিত ‘ফেক নিউজ’ বা অসত্য খবর গুগল, ফেসবুক, টুইটার বা সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশের ফলে এই জাতীয় খবর ছাপানো বা সম্প্রচারের পুরো দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের ওপর। সংবাদের সত্যাসত্যের প্রমাণ তাদেরই আদালতে দিতে হবে।
এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়াসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন শুরু থেকেই নরেন্দ্র মোদির সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছিল। বিতর্ক চলছিল ২০২১ সাল থেকেই। সব আপত্তি ও সমালোচনা উপেক্ষা করে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া গতকাল শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত দমনমূলক ও সেন্সরশিপের সমতুল্য।
অবশ্য কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর গতকাল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই পদক্ষেপ বাক্স্বাধীনতা বা মৌলিক অধিকার খর্ব করবে না।
কেরালার নিউজ চ্যানেল ‘মিডিয়া ওয়ান’-এর ওপর জারি হওয়া সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, সরকারের সমালোচনার অর্থ দেশের সমালোচনা নয়, দেশ বিরোধিতাও নয়। সরকার ও রাষ্ট্র আলাদা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার যুক্তিতে সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া যায় না। তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে জাহির করাও যায় না।
সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সংশোধনী প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, সরকার–সংক্রান্ত জাল, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার অথবা সংগ্রহ করে রাখা যাবে না। খবরের সত্যাসত্য যাচাইয়ের ভার থাকবে পিআইবির হাতে। পিআইবি কোনো খবরকে ‘অসত্য’ বা ‘ফেক নিউজ’ বলে চিহ্নিত করলে তা প্রত্যাহার তো করতেই হবে, পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হবে খবরটি ভুল বা অসত্য ছিল।